মক্কা বিজয়ের ঘটনা হতে আহরিত বিধি-বিধান
এই ছিলো ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের বিস্তারিত বিবরণ। উম্মতের জন্য যাতে রয়েছে আবশ্যকীয়রূপে গ্রহণীয় বিভিন্ন উপদেশ ও বিধিবিধান। ফাতহে মক্কার সময় প্রদত্ত নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষণ নিয়েই যদি শুধু গবেষণা করা হয়, তবে তাতে উম্মতের জন্য রয়েছে সীরাতে মুস্তাকিমের বিবিধ নির্দেশনা। মূলত জ্ঞানী পাঠকের জন্য এ ঘটনার প্রতিটি ছত্রেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য উপদেশ ও শিক্ষা! তন্মধ্য হতে কিছু বিধি-বিধান এবং উপদেশাবলী নিম্নে উল্লেখ করা হলো,
১. কোনো মুসলমান যখন অপর কোনো মুসলমানকে আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি ভালোবাসার কারণে রাগান্বিত হয়ে ঘটনার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত মুনাফেক কিংবা কাফের বলবে, তবে এ কারণে বক্তাকে (মুসলমানকে কাফের বলার কারণে) কাফের আখ্যা দেওয়া হবে না। যেমনটি ঘটেছে হযরত উমর রা. ও হাতেব ইবনে আবী বালতাআ রা. এর ক্ষেত্রে।
২. নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যারা গালি দিবে, কিংবা কটূক্তি করবে, তাদেরকে হত্যা করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ। যেমন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অপরাধের কারণে মক্কা বিজয়ে দিন সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করার পরও অন্য অনেকের সাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামর কটূক্তিকারী ইবনে খতলের দু’বাঁদিকে হত্যার হুকুম দিয়েছিলেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা মক্কাকে ‘হারাম’ (সম্মানিত) করেছেন। যেমনটি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামর খুতবায় উল্লিখিত হয়েছে। এতটাই সম্মানিত করেছেন যে, মক্কার স্থানীয় কোনো পশু-পাখী শিকার করাও বৈধ নয়। এবং এ কারণেই মক্কায় প্রবেশকারীর জন্য হজ্জ/উমরার ইহরাম ছাড়া প্রবেশ করা বৈধ নয়।
৪. হত্যাকার্যে নিহিত ব্যাক্তির ওয়ারিসদের জন্য দু’টি অধিকার রয়েছে, যেমনটি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবায় উল্লিখিত হয়েছে, (ক) কিসাস স্বরূপ হত্যাকারীকে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের সহায়তায় হত্যা করা। (খ) অথবা রক্তপণ গ্রহন করা।
৫. ছবি লটকানো আছে, এমন ঘরে নামায পড়া নিষেধ। কেননা, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততক্ষণ পর্যন্ত কাবার অভ্যন্তরে নামায পড়েননি, যতক্ষণ না সেখানে সকল প্রতিকৃতি অপসারণ করা হয়েছে।
৬. কালো পাগড়ি পরা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামর থেকে প্রমাণিত রয়েছে। মক্কায় প্রবেশকালে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো পাগড়ি পরেছিলেন। তবে সর্বাঙ্গে কালো পোষাক পরা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়।
৭. কোনো মুসলমান যদি মুরতাদ হয়ে যায় (আল্লাহর পানাহ!), এবং সে তওবা করে ফিরে না আসে, তবে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের জন্য তাকে হত্যা করার আবশ্যক হয়ে যায়। যেমন মুরতাদ হয়ে যাওয়ার অপরাধে আব্দুল্লাহ ইবনে সারাহকে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যা করেছিলেন।
৮. ক্ষমা ও উদারতার গুণ, মক্কী জীবনে সকল নির্যাতনের কথা ভুলে গিয়ে নবীজী কাফেরদেরকে যেভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
৯. সাফল্য প্রাপ্তিকে নিজের কৃতিত্ব মনে না করে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত মনে করার গুণ, যেমন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজিত হওয়ার পর কেবলই আল্লাহর প্রশংসা করছিলেন।
১০. নবীজীর প্রতি ভালোবাসাকে পিতা-মাতা বরং দুনিয়ার সকল কিছুর ভালোবাসার তুলনায় অগ্রাধিকার দান করতে হবে। যেমন অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন উম্মে হাবীবা রা. ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মক্কা বিজয়ের ইতিহাস থেকে সঠিকভাবে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন।
সমাপ্ত