১৯৯৬ সালের ১০ই আগস্ট, নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার শুকুন্দী গ্রামে এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এইচ এম শরীফ। তার পিতা আব্দুস সাত্তার একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী এবং মাতা মোসাঃ কুহিনুর একজন গৃহিনী। সাধারণ কিন্তু গুণবান এই পরিবারের মাঝে শরীফ ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মূল্য শিখতে শিখেছিলেন।
শরীফের জীবনে প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ আসে যখন তিনি কিশোর বয়সেই কুরআনের হাফেজ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ২০১২ সালে হোসাঈনবাদ মদিনাতুল উলুম মাদরাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। কিন্তু তার জীবন কেবল এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মাদরাসায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি, তার প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হয়। কম্পিউটার, ওয়েব ডিজাইন, এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের প্রতি তার আকর্ষণ এতটাই প্রবল ছিল যে, তিনি মাদরাসার নিয়মের বাইরে গিয়েও নিজে নিজে এসব শেখার চেষ্টা করতে থাকেন।
মাদরাসায় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার নিষেধ থাকলেও, শরীফ ইমামতি করতেন এবং নিজের পড়ালেখা শেষ করার পর, রাতে বা অন্য সময় সুযোগ পেলে কম্পিউটার নিয়ে বসে যেতেন। এই নিরলস পরিশ্রম এবং শেখার আগ্রহ তাকে একজন দক্ষ কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলেছে।
শরীফের শিক্ষাজীবনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় তাকমীল/মাওলানা ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে। ২০২১ সালে ঢাকার উত্তরার জামিয়া মুহিউস সুন্নাহ থেকে এই ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি জামিয়া ফারুকিয়া, নরসিংদী থেকে মুফতী ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি খড়িয়া মসজিদের ইমাম-খতীব এবং হোসাঈনবাদ মদিনাতুল উলুম মাদরাসা এবং জান্নাতুল বুশরা বালিকা মাদারাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও, তিনি শরীফ মাল্টিমিডিয়া নামক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং প্যারাডাইম শিফট এডুকেশন ইঙ্কে কম্পিউটার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছেন।
২০১৪ সালে, আলোর পথ মাসিক ইসলামি পত্রিকা তাকে "ক্ষুদে লেখক" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৫ সালে ইসলামি আন্দোলন নরসিংদী তাকে "কৃতি শিক্ষার্থী" হিসেবে সম্মানিত করে। প্রতি বছর তিনি বিভিন্ন পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন, যা তার কঠোর পরিশ্রমের একটি উজ্জ্বল প্রমাণ।
ব্যক্তিগত জীবনে শরীফ একজন সুখী মানুষ। তার স্ত্রী নাজনিন আক্তার ইতি এবং তাদের একমাত্র পুত্র রাইয়ান আহমদ তাশরীফ তার জীবনের শক্তির উৎস। শরীফের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করা এবং সমাজের মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া।
এইচ এম শরীফের জীবনের মূল অনুপ্রেরণা হলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি মানুষকে ইসলামের পথে আসার দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। শরীফ নিজেও এই ফাউন্ডেশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে "হিলফুল ফুজুল কল্যাণ পরিষদ" গঠন করেন, যার মাধ্যমে তিনি সমাজের কল্যাণে কাজ করছেন।