রাসূল সা. এর জীবনি (পর্ব - ০৯) গাযওয়ায়ে খায়বার

নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের প্রতি খুশি হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বাই‘আত গ্রহণ করছিল। তাদের অন্তরে যা-কিছু ছিল সে সম্পর্কেও তিনি অবগত ছিলেন। তাই তিনি তাদের উপরে অবতীর্ণ করলেন প্রশান্তি এবং পুরস্কারস্বরূপ তাদের দান করলেন আসন্ন বিজয় এবং বিপুল পরিমাণ গনিমতের মালও, যা তারা হস্তগত করবে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রচুর গনিমাতের, যা তোমরা হস্তগত করবে এবং তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তোমাদের এ বিজয় দান করেছেন। (সূরা ফাতহ, আয়াত:১৮-২০)

গাযওয়ায়ে খায়বার


‘খায়বার’ মদীনা থেকে ৯৬ মাইল দূরবর্তী কৃষি সম্পদের প্রাচুর্য ও দুর্গবেষ্টিত আরবের একটি শহর। হযরত আবু উবাইদ রহ. এর মতে প্রাচীন আরবগোত্র ‘আমালিকা’র খায়বার নামক এক ব্যক্তির অবস্থানের কারণে এ শহরকে খায়বার নামে নামকরণ করা হয়।
কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, ইহুদীদের ভাষায় খায়বার শব্দের অর্থ ‘কেল্লা’ বা ‘দুর্গ’। যেহেতু এ শহর অনেক কেল্লা এবং দুর্গবেষ্টিত ছিল কাজেই তাকে খায়বার নামে নামকরণ করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী, ৭:৫৭৬, মুজামুল বুলদান লিল হামাউয়ী, ২:৪৬৯)

খায়বারযুদ্ধের প্রেক্ষাপট


হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, হিজরতের পর কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোকাবেলায় তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে,
১. এক শ্রেণি পূর্ববৎ শত্রুতা এবং যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। মক্কার কুরাইশরা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২. এক শ্রেণি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে ভবিষ্যতের অপেক্ষায় নীরবতা অবলম্বন করে। ইসলামও গ্রহণ করলো না এবং শত্রুতায়ও অবতীর্ণ হলো না।  আরবের কোন কোন গোত্রের ভূমিকা এমন ছিল। 
৩.  এক শ্রেণি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এ মর্মে ‘মৈত্রি চুক্তি’ তে আবদ্ধ হয়, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে না এবং তার বিরুদ্ধে কারো সহযোগিতা করবে না।  মদীনার ইহুদী গোত্র- বনু কুরাইযা, বনু নাযির এবং বনু কায়নুকা; এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এ তিন ইহুদী-গোত্রই পর্যায়ক্রমে মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গ করে গোপনে-প্রকাশ্যে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধ-ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ফলে তিন গোত্রকেই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দমন করে মদীনা হতে বহিষ্কার করেন। (ফাতহুল বারী, ৭:৪০২)
এরই ধারাবাহিকতায় চতুর্থ হিজরিতে মদীনার ইহুদী সম্প্রদায় বনী নযীর কে মদীনা থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ইহুদীদের অধিকাংশ খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। যাদের মধ্যে ইহুদী সরদার হুয়াই ইবনে আখতাব, কিনানা ইবনে রবী এবং সাল্লাম ইবনে আবুল হুকাইকও ছিল। খায়বারে বহিষ্কৃত হয়েও তারা ইসলাম ও মুসলিমদের ধ্বংস-সাধনে প্রচেষ্টারত হয়। 
এ প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে ইহুদী নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব মক্কায় গিয়ে কুরাইশ নেতাদের মদীনায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উসকানি দিয়েছিল।  একইভাবে কিনানা ইবনে রবী গাতফান গোত্রকে খায়বারের বাৎসরিক উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক প্রদানের লোভ দেখিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেছিল।  তাদের এ উসকানি ও প্ররোচনায় সাড়া দিয়ে উয়াইনা ইবনে হিসন তার মিত্রগোত্র নিয়ে এবং আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নিয়ে মুসলিমদের উপর হামলার উদ্দেশ্যে মদীনায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।  ইতিহাসে তা আহযাব যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। (ফাতহুল বারী, ৭:৪০২) যে যুদ্ধের বর্ণনা পাঠক ইতোপূর্বে অবগত হয়েছেন।
খায়বারের ইহুদীদের বারবার এভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অপরাধে আল্লাহ তা‘আলা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খায়বার আক্রমণের নির্দেশ দেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪:১৯৮; সীরাতে মুস্তফা, ২:২৬৭,৩০৭,৪০৮)

খায়বার যুদ্ধে বিজয়ের সুসংবাদ

ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়া হতে প্রত্যাবর্তনকালে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খায়বার যুদ্ধে বিজয়ের ভবিষ্যত সুসংবাদ প্রদান করেন,
لَقَدْ رَضِیَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ یُبَایِعُوْنَکَ تَحْتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیْ قُلُوْبِهِمْ فَاَنْزَلَ السَّکِیْنَۃَ عَلَیْهِمْ وَ اَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِیْبًا○وَّ مَغَانِمَ کَثِیْرَۃً یَّاْخُذُوْنَهَا ؕ وَ کَانَ اللهُ عَزِیْزًا حَکِیْمًا○وَعَدَكُمُ اللهُ مَغَانِمَ کَثِیْرَۃً تَاْخُذُوْنَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هٰذِهٖ وَ کَفَّ اَیْدِیَ النَّاسِ عَنْكُمْ ۚ  وَ لِتَكُوْنَ اٰیَۃً لِّلْمُؤْمِنِیْنَ وَ یَهْدِیَكُمْ صِرَاطًا مُّسْتَقِیْمًا○
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের প্রতি খুশি হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার কাছে বাই‘আত গ্রহণ করছিল।  তাদের অন্তরে যা-কিছু ছিল সে সম্পর্কেও তিনি অবগত ছিলেন। তাই তিনি তাদের উপরে অবতীর্ণ করলেন প্রশান্তি এবং পুরস্কারস্বরূপ তাদের দান করলেন আসন্ন বিজয় এবং বিপুল পরিমাণ গনিমতের মালও, যা তারা হস্তগত করবে।  আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।  আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রচুর গনিমাতের, যা তোমরা হস্তগত করবে এবং তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তোমাদের এ বিজয় দান করেছেন।  (সূরা ফাতহ, আয়াত:১৮-২০)
এ আয়াতে ‘বাই‘আত’ দ্বারা বায়‘আতে রিদওয়ান এবং ‘আসন্ন বিজয়’ ও ‘তাৎক্ষণিক বিজয়’দ্বারা খায়বার বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।


About the Author

ছোট বেলা থেকেই টেকনোলজির নিজের ভিতর অন্যরকম একটা টান অনুভব করি। যদিও কওমি মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরেই ছিল বসবাস। তারপরও অধম্য আগ্রহের কারনে যতটুকু শিখেছি ততটুকু ছড়িয়ে দিতে চাই সকলের মাঝে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Sharif Multimedia হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনাকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম!
আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?
Type here...