সীরাতে ঈসা আ: (পর্ব: - ০২) পূর্ববর্তী কিতাবে ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী

যে জাতি ও উম্মতের মাঝে সেই মর্যাদাবান নবীর আবির্ভাব হতো, বহু শতাব্দী পূর্ব হতে সে উম্মতের নবীগণ উক্ত মর্যাদাবান নবীর আগমনের সুসংবাদ আল্লাহর ওহীর মাধ্যমে কওমকে জানিয়ে দিতেন। যেন সত্যের দাওয়াতের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং যখন সেই নূর উদ্ভাসিত হওয়ার সময় হবে, তখন উম্মতের জন্য তার আকস্মিক আগমন অনাহূত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার না হয়ে যায়।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আল্লাহপ্রদত্ত দীনের দাওয়াত ও তাবলীগের ধারা যদিও হযরত আদম ‘আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে। কিন্তু এ ধারা বিশেষভাবে শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা কয়েক শতাব্দী পর পর এমন একজন উচ্চ মনোবল সম্পন্ন সুমহান মর্যাদার অধিকারী পয়গাম্বরকে পাঠাতেন, যিনি কালের ঘূর্ণাবর্তে সৃষ্ট আত্মিক শৈথিল্য দূর করে সত্য গ্রহণের নিভুপ্রায় আগ্রহ পুনরায় প্রোজ্জ্বল করে তোলতেন এবং রুহানী দুর্বল অবস্থাসমূহ সবল থেকে সবলতর করে দিতেন, যা দেখে মনে হত, ধর্মের ঘুমন্ত জগতে হক ও হক্কানিয়াত এবং সত্য ও সততার শিঙ্গা ফুঁকে এক মহাবিপ্লবের জন্ম দিয়ে মৃত অন্তরসমূহে নব প্রাণের সঞ্চার করা হয়েছে।

যে জাতি ও উম্মতের মাঝে সেই মর্যাদাবান নবীর আবির্ভাব হতো, বহু শতাব্দী পূর্ব হতে সে উম্মতের নবীগণ উক্ত মর্যাদাবান নবীর আগমনের সুসংবাদ আল্লাহর ওহীর মাধ্যমে কওমকে জানিয়ে দিতেন। যেন সত্যের দাওয়াতের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং যখন সেই নূর উদ্ভাসিত হওয়ার সময় হবে, তখন উম্মতের জন্য তার আকস্মিক আগমন অনাহূত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার না হয়ে যায়। 

হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামও সেই দৃঢ় মনোবল ও সুমহান মর্যাদার অধিকারী নবীগণের অন্যতম।

এ কারণেই দেখা যায় যে, বনী ইসরাইলের অনেক নবী তার আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন। আর এ সুসংবাদের ভিত্তিতে বনী ইসরাইল প্রতিশ্রুত ‘ঈসার আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় ছিল, যেন তার আবির্ভাবের পর পুনরায় তারা হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামের যামানার ন্যায় সমুদয় জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে বিশিষ্ট ও সম্মানিত হতে পারে এবং হেদায়েতের শুষ্ক ক্ষেত্রে সজীবতা ফিরে আসে আর আল্লাহর মহিমা ও মাহাত্ম্য দ্বারা তাদের অন্তর সমুজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেজন্যই শব্দগত ও অর্থগত বিকৃতির শিকার হওয়ার পরও বর্তমান বাইবেলে হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের আগমনের সুসংবাদগুলো রয়ে গেছে। 

সেই তাওরাতের বিবরণে উল্লেখ আছে, ‘মুসা ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা সাইনা হতে আগমন করেছেন, সায়ির থেকে উদিত হয়েছেন এবং ফারানের পর্বতমালা হতে আলোকিত হয়েছে। এখানে সাইনা হতে আল্লাহ তা‘আলার আগমন দ্বারা হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামের নবুওয়্যাত লাভের প্রতি এবং সায়ির হতে উদিত হওয়ার দ্বারা হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা, হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম সায়ির পাহাড়ের একটি টিলা ‘বাইতু লাহমে’ জন্মলাভ করেন। আর ফারানের পর্বতমালা হতে আলোকিত হওয়ার দ্বারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা, ফারান হলো হেজাযের প্রসিদ্ধ পাহাড় সারির নাম। (তাওরাত, অধ্যায়:৩৩ পদ:২০) 

হযরত ইয়াস‘আ ‘আলাইহিস সালামের সহীফায় বর্ণিত আছে, ‘দেখ, আমি তোমার পরে একজন পয়গাম্বর পাঠাচ্ছি, যিনি তোমার রাস্তা প্রস্তুত করবেন। ময়দানে এক আহ্বানকারীর ধ্বনি ভেসে এলো, ‘আল্লাহর রাস্তা প্রস্তুত করো, তার রাস্তা সোজা-সরল করো’। এ সুসংবাদে ‘পয়গাম্বর’ শব্দ দিয়ে হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে এবং ‘ময়দানে আহ্বানকারী’ বলে হযরত ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালাম হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের আগমনের সংবাদ ঘোষণা করতেন এবং তার নবুওয়্যাতের সুসংবাদ শুনাতেন। (তাওরাত, অধ্যায়:৪০ পদ:৩-৮)

তেমনিভাবে ইউহান্নার ইঞ্জিলে বর্ণিত রয়েছে, যখন ইহুদীরা জেরুজালেম হতে কাহেন আনলো ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য যে, ‘আপনি কে’ তখন তিনি অকপটে স্বীকার করলেন, আমি প্রতিশ্রুত মাসীহ নই। তারা জিজ্ঞেস করলো, আপনি কে? আপনি কি ইলিয়া? তিনি বললেন, আমি ইলিয়া নই। তারা বললো, তবে কি আপনি সেই প্রতিশ্রুত নবী? তিনি ‘না’ বললেন। অবশেষে তারা প্রশ্ন করলো, তা হলে আপনি কে? আপনি আমাদের জানান, যাতে আমরা সেসব লোককে আপনার ব্যাপারে বলতে পারি, যারা আমাদের পাঠিয়েছে এ কথা জানার জন্য যে, আপনি নিজের ব্যাপারে কী বলেন? তিনি বললেন, আমি তো সেই ব্যক্তি, যেমন, হযরত ইয়াস‘আ ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন অর্থাৎ ময়দানে আহ্বানকারীর আওয়াজ এলো, তোমরা খোদার রাস্তা তৈরি করো। (অধ্যায়:১ পদ:১৯-২৩)

মার্ক ও লুকের ইঞ্জিলে বর্ণিত আছে, তারা সবাই প্রতীক্ষা করছিল এবং দিলে দিলে ভাবছিল, ইউহান্না সেই প্রতিশ্রুত মাসীহ কি না? তখন ইউহান্না সবার জবাবে বললেন, আমি তো তোমাদের যাজকনিদর্শন দিচ্ছি, তবে যিনি আমার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান, তিনি অচিরেই আগমন করবেন। আমি তো তার জুতোর ফিতা খোলারও যোগ্য নই। তিনি তোমাদের রুহুল কুদস থেকে যাজকনিদর্শন দিবেন। (লক্কার ইঞ্জীল, বাব:২, আয়াত, ১৫-১৬)  

উভয় সুসংবাদ হতে বুঝা যায়, ইহুদীরা তাদের ধর্মীয় বর্ণনানুসারে হযরত ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালামের প্রতীক্ষায় ছিলো। আর হযরত ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালাম তার আগমনের সুসংবাদ দানকারী ছিলেন।

About the Author

ছোট বেলা থেকেই টেকনোলজির নিজের ভিতর অন্যরকম একটা টান অনুভব করি। যদিও কওমি মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরেই ছিল বসবাস। তারপরও অধম্য আগ্রহের কারনে যতটুকু শিখেছি ততটুকু ছড়িয়ে দিতে চাই সকলের মাঝে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
দয়া করে এড ব্লকার বন্ধ করুন
আমাদের সাইটটি পরিচালনা করতে বিজ্ঞাপনগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনগুলি আমাদের সাইটটি বিনামূল্যে রাখতে সহায়তা করে এবং আমাদের আরও উন্নত কনটেন্ট সরবরাহ করতে সহায়তা করে। দয়া করে এড ব্লকার নিষ্ক্রিয় করুন এবং আমাদের সাইটটি উপভোগ করুন। আপনার সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
Sharif Multimedia হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনাকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম!
আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?
Type here...